রক্ত কি ?
রক্ত লাল রঙের তরল যোজক কলা / টিস্যু । অজৈব লবণের উপস্থিতির জন্য রক্তের স্বাদ নোনতা । একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ পুরুষ মানুষের দেহে প্রায় ৫ - ৬ লিটার রক্ত থাকে যা মোট ওজনের ৮ % । একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মহিলা মানুষের দেহে প্রায় ৪.৫ - ৫.৫ লিটার রক্ত থাকে যা মোট ওজনের ৭ - ৮ % । রক্ত সামান্য ক্ষারীয় , চটচটে এবং অস্বচ্ছ । মানবদেহে গড়ে রক্তের পরিমাণ ৫ লিটার । রক্তের pH মাত্রা ৭.৩৫ - ৭.৪৫ এবং তাপমাত্রা 98.4 ডিগ্রী ফারেনহাইট / 36 - 38 C । রক্তের আপেক্ষিক গুরুত্ব পানির চেয়ে বেশি ( প্রায় - ১.০৬৫ ) । হেপারিন নামক পদার্থের কারনে মানবদেহে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না । স্বাভাবিকভাবে দেহে কোথাও কেঁটে গেলে রক্ত জমাট বাঁধতে ৪ -৫ মিনিট সময় লাগে ।
রক্তের উপাদানঃ রক্তের উপাদান হলো ২ টি । যথা : ১ ) ফ্লাজমা / রক্তরস ( ৫৫ % ) ২ ) রক্তকণিকা ( ৪৫% ) । স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তকণিকাগুলো রক্তরসে ভাসমান থাকে । লোহিত রক্তকণিকার আধিক্যের কারণে রক্ত লাল দেখায় ।
ফ্লাজমা / রক্তরসঃ ফ্লাজমা / রক্তরস হচ্ছে হালকা হলুদ বর্ণের তরল অংশ । এতে পানির পরিমাণ ৯০ - ৯২ % । রক্তরসের কঠিন পদার্থ বিভিন্ন জৈব ( ৭ - ৮ % ) ও অজৈব ( ০.৯ % ) উপাদান নিয়ে গঠিত । রক্তরসের উপাদানগুলো হলো ( গ্লুকোজ , এ্যামিনো এসিড , স্নেহ পদার্থ , লবণ , ভিটামিন ইত্যাদি ) । রক্তরস রক্তের অল্ম ও ক্ষারের মধ্যে সমতা রক্ষা করে ।
রক্তকণিকাঃ রক্ত কণিকা প্রধানত তিন প্রকার । যথাঃ ১ ) লোহিত রক্ত কণিকা বা এরিথ্রোসাইট ২ ) শ্বেত রক্ত কণিকা লিউকোসাইট ৩ ) অণুচক্রিকা বা থ্রাম্বোসাইট ।
লোহিত রক্ত কণিকা বা এরিথ্রোসাইটঃ মানুষের পরিণত লোহিত রক্তকণিকা গোল , দ্বি - অবতল নিউক্লিয়াসবিহীন চাকতির মতো লাল বর্ণের । এতে হিমোগ্লোবিন নামক এক প্রকার রন্জক পদার্থ থাকে । সুস্থ দেহে প্রতি ১০০ মিলিলিটার রক্তে ১৬ গ্রাম হিমোগ্লোবিন থাকে । প্রতি ঘনমিটার রক্তে লোহিত কণিকার সংখ্যা ৫০ লক্ষের বা ২৫% এর কম হলে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয় । কিন্তু এ সংখ্যা ৬৫ লক্ষের বেশি হলে তাকে পলিসাইথোমিয়া বলে । রাসায়নিকভাবে এদের ৬০ - ৭০ % পানি এবং ৩০ - ৪০ % কঠিন পদার্থ । কঠিন পদার্থের মধ্যে প্রায় ৯০ % ই হিমোগ্লোবিন । হিম নামক গ্রুপের জন্যই রক্ত লাল হয় । লোহিত রক্ত কণিকার আয়ুষ্কাল ১২০ দিন বা ৪ মাস । কণিকাগুলো যকৃত ও প্লীহাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় । লোহিত রক্তকণিকার হিমোগ্লোবিন ফুসফুস থেকে দেহকোষে অধিকাংশ অক্সিজেন ও সামান্য পরিমাণ কার্বন-ড্রাই-অক্সাইড পরিবহন করে । রক্তের ঘনত্ব ও সান্দ্রতা রক্ষা করা এর কাজ । এটি বিলিরুবিন ও বিলিভার্ডিন উৎপন্ন করে ।
শ্বেত রক্তকণিকা লিউকোসাইটঃ মানবদেহে পরিণত শ্বেত রক্তকণিকা হিমোগ্লোবিন বিহীন , অনিয়তকার ও নিউক্লিয়াসযুক্ত রডকোষ । এগুলো ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু ধ্বংস করে । একে মানবদেহের সৈনিক নামে ডাকা হয় । মানুষের শ্বেত রক্তকণিকা নির্দিষ্ট আকার বিহীন । এগুলো লোহিত রক্তকণিকার চেয়ে বড় । মানবদেহে প্রতি ঘনমিটার রক্তে এদের পরিমমাণ ৫ -৮ হাজার ।
শ্বেত রক্ত কণিকার আয়ুষ্কাল ৭ - ১০ দিন । রক্তে এর পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেলে লিউকেমিয়া / Blood Cancer হয় এবং স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে লিউকোপেনিয়া হয় ।
অণুচক্রিকা থ্রাম্বোসাইটঃ অণুচক্রিকা সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম রক্তকণিকা । এটি গোল , ডিম্বাকার , বা রডের মতো দানাদার কিন্তু নিউক্লিয়াসবিহীন । এতে প্রচুর পরিমাণ সেফালিন নামক ফসফোলিপিড থাকে । এদের গড় আয়ুষ্কাল ৫ -১০ দিন । আয়ুষ্কাল শেষ হলে এরা প্লীহা ও লসিকা গ্রন্থির অন্যান্য রেটিকুলো - এন্ডিথেলিয়াল কোষে বিনষ্ট হয় । এরা ক্ষতস্থানে রক্ত তঞ্চন ঘটায় এবং হিমোস্টাটিক প্লাগ গঠন করে রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে । রক্ত তঞ্চনে অংশ নেয় রক্তরসে অবস্থিত ১৩ টি ভিন্ন ভিন্ন ক্লটিং ফ্যাক্টর । রক্ত জমাট বাঁধতে স্বাভাবিকভাবে সময় নেয় ৪ - ৫ মিনিট ।
Blood Group and Rh factor :
Blood Group : ১৯০০ / ১৯০১ সালে অষ্টিয়ার জন্মগ্রহণকারী আমেরিকান বিজ্ঞানি ড . কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার Blood Group আবিষ্কার করেন । মানুষের Blood Group ৪ টি । যথা : A , B , AB , O . ‘ AB ’ Group সর্বগ্রহীতা ও ‘ O ’ Group সর্বদাতা ।
Rh factor : ১৯৪০ সালে ড.কার্ল ল্যান্ডসেইনার ও উইনার রেসাস বানরের উপর গবেষণা করে Rh ফ্যাক্টর আবিষ্কার করেন । Rh factor positive হলে রক্তের Group পজেটিভ এবং Rh factor Negative হলে রক্তের Group Negative ।
রক্তচাপ বা ব্লাড পেশার : রক্তনালীর ভেতর দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার সময় প্রাচীর গাত্রে যে পাশ্বচাপ প্রয়োগ করে তাকে রক্তচাপ বলে । একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়সস্ক মানুষের
স্বাভাবিক সিস্টোলিক চাপ হচ্ছে ১১০ - ১২০ mmHg এবং স্বাভাবিক ডায়াস্টোলিক চাপ ৭০ - ৮০ mmHg । রক্ত স্বাভাবিক সীমার উপরে থাকলে তাকে উচ্চ রকক্তচাপ
এবং স্বাভাবিক সীমার নিচে থাকলে তাকে নিম্ন রক্তচাপ বলে । মানুষের রক্তচাপ মাপার যন্ত্রকে স্ফিগমোম্যানোমিটার বলে ।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নাবলী -
০১ ) মানুষের রক্তে লোহিত কণিকা কোথায় সঞ্চিত থাকে ? ➫ প্লীহাতে । ( 36 th Bcs )
০২ ) হিমোগ্লোবিন কোন জাতীয় পদার্থ ? ➫ আমিষ । ( 35 th Bcs )
০৩ ) রক্তে হিমোগ্লোবিনের কাজ কী ? ➫ অক্সিজেন পরিবহন করা । ( 34 , 25 th Bcs )
০৪ ) অতিরিক্ত খাদ্য থেকে লিভারে সঞ্চিত সুগার হলো - ➫ গ্লাইকোজেন । ( 34 th Bcs )
০৫ ) মানব দেহে শক্তি উৎপাদনের প্রধান উৎস কি ? ➫ শ্বসন । ( 34 th Bcs )
০৬ ) কোনটি রক্তের কাজ নয় ? ➫ জারক রস বিতরণ করা । ( 15 th Bcs )
০৭ ) রক্তকণিকায় কোনটি থাকে ? ➫ হিমোগ্লোবিন ।
০৮ ) উচ্চ রক্ত চাপের জন্য দায়ী কোনটি ? ➫ পিটুইটারি গ্রন্থি ।
০৯ ) রক্তে লোহিত রক্ত কণিকার কাজ কি ? ➫ অক্সিজেন বহন করা ।
১০ ) সিস্টোলিক চাপ বলতে কি বুঝায় ? ➫ হৃদপিন্ডের সংকোচন চাপ ।
১১ ) বাংলাদেশে রক্তদানে কোন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আছে ? ➫ সন্ধানী ।
১২ ) পূর্ণবয়স্ক পুরুষের মোট রক্তের গড় পরিমাণ কত ? ➫ ৫ লিটার ।
১৩ ) পূর্ণাঙ্গ ব্যক্তির ফুসফুসে বায়ু ধারণ ক্ষমতা কত ? ➫ ৬ লিটার ।
১৪ ) মানুষের রক্তে কত ধরনের কণিকা আছে ? ➫ ৩ ধরনের ।
১৫ ) লোহিত রক্ত কণিকার আয়ুষ্কাল কত ? ➫ ১২০ দিন ।
১৬ ) রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে কোনটি ? ➫ ফাইব্রিনোজেন ।
১৭ ) মানবদেহের গঠনে কোন উপাদানের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি ? ➫ আমিষ ।
১৮ ) মানুষের রক্তে PH কত ? ➫ ৭ . ৪ ।
১৯ ) হিমোগ্লোবিন কোথায় থাকে ? ➫ লোহিত রক্ত কণিকায় ।
২০ ) একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে কত লিটার রক্ত থাকে ? ➫ ৫ - ৬ লিটার ।
২১ ) মানুষের দেহে শ্বেত রক্তকণিকা ও লোহিত রক্তকণিকার অণুপাত কত ? ➫ ১ঃ৭০০ ।
২২ ) খাদ্যের কোন উপাদান হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে ? ➫ আমিষ ।
২৩ ) রক্তের কোন গ্রুফকে সার্বজনীন গ্রহীতা বলা হয় ? ➫ AB .
২৪ ) ইনসুলিন কি ? ➫ এক ধরনের হরমোন ।
২৫ ) আমাদের দেহকোষ রক্ত থেকে কি গ্রহণ করে ? ➫ অক্সিজেন ও গ্লুকোজ ।
২৬ ) রক্তের কোন গ্রুফকে সার্বজনীন দাতা বলা হয় ? ➫ O+.
২৭ ) রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে কোনটি ? ➫ অনুচক্রিকা ।
২৮ ) ফাইব্রিজোন কোথায় তৈরি হয় ? ➫ যকৃত ।
২৯ ) রক্ত শূন্যতার ফলে চুপসে যায় কোনটি ? ➫ শিরা ।
৩০ ) দেহের অভ্যন্তরে রক্ত জমাট বাঁধে না কেন ? ➫ রক্তে হেপারিন থাকায় ।
৩১ ) হাইপোগ্লাইসেনিয়া কিসের অভাবে হয় ? ➫ রক্তের গ্লুকোজ ।
৩২ ) লোহিত রক্তকণিকা কোথায় তৈরি হয় ? ➫ লোহিত অস্থিমজ্জায় ।
৩৩ ) ব্লাড ক্যান্সার কেন হয় ? ➫ শ্বেত রক্তকণিকা বৃদ্ধির ফলে ।
৩৪ ) রক্তশূন্যতা বলতে কি বুঝায় ? ➫ রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাওয়া ।
৩৫ ) রক্তে শ্বেত রক্তকণিকা কোষ বেড়ে যাওয়াকে কি বলে ? ➫ লিউকোমিয়া ।
৩৬ ) রক্তে প্রোটিনের হার কত ? ➫ ৫৫ % ।
৩৭ ) কোন হরমোন রক্তে ক্যালসিয়াম নিয়ন্ত্রণ করে ? ➫ থাইরোক্যালসিটোননিন ।
৩৮ ) রক্ত জমাট বাঁধায় কোন ধাতুর আয়ন সাহায্য করে ? ➫ ক্যালসিয়াম ।
৩৯ ) লিস্ফোসাইটের আয়ুষ্কাল কত ? ➫ কয়েকঘন্টা - ১ দিন ।
৪০ ) কোন রাসায়নিক পদার্থ রক্ত নালীর সংকোচন করে ? ➫ সেরোটোনিন ।