১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হলে ও এটি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান এই দুই অংশে বিভক্ত ছিল । পূর্ব পাকিস্তানের শতকরা ৫৬.৪০ ভাগ লোকের মুখের ভাষা ছিল বাংলা । এটি সত্বেও পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী তাদের রাষ্ট্রীয় ভাষা পূর্ব বাংলার মানুষের মাঝে ছাপিয়ে দিতে থাকে । তাই পশ্চিম পাকিস্তানিদের সাথে পূর্ব বাংলার মুসলমানদের সাথে ভাষার প্রশ্নে বির্তকের সূত্রাপাত হয় ।
১ সেপ্টেম্বর , ১৯৪৭ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে ‘ তমদ্দুন মজলিশ ’ গঠন করা হয় । ১ অক্টোবর , ১৯৪৭ সালে তমদ্দুন মজলিশের উদ্যেগে অধ্যাপক নুরুল হকের নেতৃত্বে ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ’ গঠন করা হয় । ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকে ও গণপরিষদের ভাষা হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার জন্য দাবি উত্থাপন করেন ।
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ঢাকা শহরে তমদ্দুন মজলিশ ও অন্যান্য ছাত্র সংগঠন রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন করে । এই দিন শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৬৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ১৫ মার্চ ছাত্র আন্দোলনের মুখে তাদের কে মুক্তি দেওয়া হয় । ছাত্রদের ভাষা আন্দোলনের তীব্রতা লক্ষ্য করে খাজা নাজিম উদ্দীন ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সাথে ৮ দফা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন । ১৯ মার্চ , ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের গর্ভনর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় আসেন এবং ২৩ মার্চ ঢাকার রের্সকোস ময়দানে ঘোষণা করেন , “ পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উদু , অন্যকোন ভাষা নয় । ” পরবর্তীতে ২৬ জানুয়ারি , ১৯৫২ সালে খাজা নাজিম উদ্দীন পল্টন ময়দানে ঘোষণা করেন , “ Urdu and only Urdu shall be the state language of Pakistan . ” উপস্থিত ছাত্ররা না না কলে এর প্রতিবাদ করেন ।
খাজা নাজিম উদ্দীন এবং মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর এহেন বক্তব্যে পূর্ববাংলার জনগণ ভাষার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে । আন্দোলনের তীব্রতা দেখে পূর্ববাংলার মূখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন ২০ ফেব্রুয়ারি ‘৫২ থেকে ঢাকা শহরে সকল প্রকারের সভা - সমিতি এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন এবং ১৪৪ ধারা জারি করেন । ভাষা আন্দোলনকারী শিক্ষাথীরা ২১ ফেব্রুয়ারি , ১৯৫২ সকাল ১০ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় ভাষা সৈনিক গাজীউল হকের সভাপতিত্বে এবং আব্দুস সামদের মদ্যস্থতায় ১০ জন করে একটি দল বেরিয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নেয় । মিছিলে পুলিশের সাথে ছাত্র - ছাত্রীদের সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালালে পুলিশের গুলিতে রফিক , আবদুস সালাম , আবুল বরকত , আব্দুল জব্বার ঘটনাস্থলে নিহত হন ।
১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি রাতেই রাজশাহী কলেজ চত্বরে একুশের প্রথম শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয় । পরবর্তীতে ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের সামনে যে স্থানে পুলিশ গুলি করেছিল সেখানে ছাত্ররা শহীদ মিনার নির্মাণ করেন । ২৪ ফেব্রুয়ারি শহীদ শফিউরের পিতা মৌলবী মাহবুবুর রহমান এটির উদ্ভাবন করেন ।
২১ ফেব্রুয়ারি এখন শুধুমাত্র বাঙ্গালিদের মাতৃভাষা নয় , এটি অর্জন করে নিয়েছে আন্তজার্তিক স্বীকৃতি । ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ১৮৮ টি দেশের সমর্থনে ইউনেস্কোর ৩১ তম সম্মেলনে ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যথাযথ মর্যাদার সাথে পালিত হয়ে আসছে ।