আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যূত্থান

পাকিস্তান সরকার ১৯৬৮ সালের ৬ জানুয়ারি ঘোয়ণা করে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য একটি ষড়যন্ত্র উদঘাটিত হয়েছে । এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এক নং আসামি করে মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় । এই মামলার সরকারি নাম ছিল ,“ রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য ।” এই মামলায় অভিযোগ আনা হয় যে শেখ মুজিব কতিপয় উগ্রপন্থী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে ভারতের সহযোগিতায় সশস্ত্র উপায়ে পূর্ব পাকিস্তানকে বিাচ্ছন্ন করতে চেয়েছিলেন ।


১৯৬৮ সালের ২১ এপ্রিল বিচারপতি এস.এ রহমানের নেতৃত্বে একটি বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করা হয় । ১৯৬৮ সালের ১৯ জুন কুর্মিটোলা সেনানিবাসে কড়া পাহারায় এই বিচারকার্য শুরু হয় । এই মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে ব্রিটেনের প্রখ্যাত আইনজীবি স্যার টমাস উইলিয়াম মামলা লড়েন । ট্রাইবুনালের প্রধান বিচাপতি এস . এ রহমানের নেতৃত্বে যখন কুর্মিটোলা সেনানিবাসে ষড়যন্ত্র ও প্রহসনমূলক মামলা চলতে থাকে তখন গোটা দেশের মানুষ আগুনের ফুলকির মত জ্বলতে থাকে । তারা বিক্ষোভ ও মিছিলে মিছিলে রাজপথ প্রকম্পিত করতে থাকে । এই মাসলার ১৭ নং আসামি সার্জেন্ট জহরুল হককে ১৯৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বন্দি অবস্থায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে । উত্তেজিত জনতার মুখে আইয়ুব সরকার ভয় পেয়ে যায় এবং ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করা হয় ।

গণঅভ্যূত্থান

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যূত্থানের মূল কারণ ছিল আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের ও নেতাদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার এছাড়াও ছাত্রদের উপর পুলিশের অকথ্য নির্যাতন । ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন মিলে তোফায়েল আহমেদকে সভাপতি করে ‘ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ( SAC) ’ গঠন করে । ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের ৮ টি রাজনৈতিক দল মিলে ‘ গনতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ ’ গঠন করেন । পুলিশী নির্যাতনের প্রতিবাদে SAC ও DAC ২০ জানুয়ারি সারা পূর্ববাংলায় ধর্মঘট আহ্বান করেন । ওইদিন সর্বাত্বক হরতাল পালনকালে একজন পুলিশ অফিসারের গুলিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান নিহত হন । ২৪ জানুয়ারি ১৯৬৯ সালে নবকুমার ইনস্টিউটের দশম শ্রেনির ছাত্র মতিউর রহমান পুলিশের গুলিতে শহীদ হন । ১৮ ই ফেব্রুয়ারি , ১৯৬৯ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যলয়ের প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক শামসুজ্জোহাকে হত্যা করা হয় । অবশেষে এ আন্দোলনের ফলে আইয়ুব - মোনায়েম খানের সৈরাচারী শাসনের পতন হয় ।

Adnan Mahfuj

‘‘ বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামী করে যে আগরতলা মামলা হয়েছিল তা থেকে বের হয়ে আসর জন্য ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যূত্থান ছিল গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ । গুরুত্বপূর্ণ এই নোটটি পড়লে আশা করি ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যূত্থান নিয়ে আসা প্রশ্ন কমন পাবেন ।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *