জন্ম ও শৈশব
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৭ মার্চ , ১৯২০ সালে রোজ মঙ্গলবার ফরিদপুর জেলার গোপালগন্জ মহকুমার পাটগাতী ইউনিয়নের টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান ও মাতার নাম সায়েরা খাতুন ।
বঙ্গবন্ধুর ডাক নাম ছিল খোকা । বাবা - মা আদর করে এই নামে ডাকতেন । গ্রামবাসী ডাকতেন মিঞা ভাই । বন্ধুরা ডাকত মুজিব ভাই নামে । মুজিব শব্দের অর্থ - উত্তর দাতা । তার নানা শেখ আবদুল মজিদ এই নাম রাখেন । বঙ্গবন্ধু চার বোন ও দুই ভাইয়ের মমধ্যে ছিলেন তৃতীয় । তিনি ছিলেন সুঠাম দেহের অধিকারী । লম্বায় তিনি ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি ছিলেন । ১৯৩৩ সালে ১৩ বছর বয়সে বেগম ফজিতুন্নেছার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন । পারিবারিক জীবনে তিনি ছিলেন পাঁচ সন্তানের জনক ।
শিক্ষা জীবন
বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা জীবনের সূচনা হয় ১৯২৭ সালে ৭ বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা বিদ্যালয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে । ১৯২৯ সালে তিনি গোপালগন্জ সীতারাম একাডেমীতে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন । ১৯৩৪ সালে ৭ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তিনি বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হন । ১৯৩৭ সালে গোপালগন্জের মাধুরানাথ স্কুলে ভর্তি হন এবং ৩ বছর বন্ধ থাকার পর আবার পড়াশোনা শুরু করেন । তার গৃহশিক্ষক ছিলেন কাজী আবদুল হামিদ এম এস সি । ১৯৪০ সালে তিনি দশম শ্রেণীতে উর্ত্তীণ হন ।
১৯৪২ সালে তিনি এনট্রান্স ( বর্তমানে এস এস সি ) পরীক্ষা পাশ করেন । তিনি কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে আই এ ভর্তি হন । সেখানে তিনি বেকার হোস্টেলের ২৪ নং কক্ষে থাকতেন । ১৯৪৭ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএ পাশ করেন । একই বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ল’ক্লাসে ভর্তি হন ।
রাজনৈতিক জীবন
বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় তার গৃহশিক্ষক কাজী আবদুল হামিদ এম এস সি এর হাত ধরেই । ১৯৩৯ সালে তিনি গোপালগন্জ সম্পাদক হিসেবে মুসলিম ছাত্রলীগে যোগদান করেন । ১৯৪০ সালে নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগদান করেন এবং ১ বছরের জন্য কাউন্সিলর নির্বাচিত হন । তিনি সে সময় সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন । ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন । ১৯৪৯ সালে তিনি আওয়ামীলীগ গঠন করেন এবং যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন । ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে তিনি গোপালগন্জ আসনে বিজয়ী হন এবং যুক্তপ্রন্ট মন্তীসভার মিল্প , বাণিজ্য , শ্রম , দূর্নীতি দমন ও ভিলেজ এইড মন্ত্রী ছিলেন ।
১৯৬৬ সালের ৫ - ৬ ফেবরুয়ারি লাহোরে ৬ দফা উপস্থাপন করেন এবং ১৯৬৬ সালের ১ মার্চ দলের সভাপতি নির্বাচিত হন । ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করেন । ১৯৭১ সালে ৭ই মার্চ স্বাধীনতার লক্ষে তিনি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রদান করেন । স্বাধীনতার পর তিনি ১৯৭৩ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন । ১৯৭৫ সালের ২৫ ফেবরুয়ারি তিনি এক ডিক্রির মাধ্যমে বাকশাল নামে একক রাজনৈতিক দল গঠন করেন ।
বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন
বঙ্গবন্ধু তার জীবনের সোনালি চৌদ্দ বছর কারাগারে কাটিয়েছিলেন । ১৯৩৮ সালে তিনি প্রথম সাত দিনের জন্য কারাভোগ করেন । তিনি মোট ২১ বার গ্রেপ্তার হন এবং ৪ হাজার ২৮২ দিন কারাভোগ করেন । ১৯৬৬ সালে ৬ দফার দাবিতে তিনি মোট ৮ বার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ।
বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মোট ৩৫ জনকে প্রধান আসামি করে ১৯৬৮ সালে আগরতলা মামলা দায়ের করা হয় । উক্ত মিথ্যা মামলায় শেখ মুজিবকে সাজা দেওয়ার পরিকল্পনা বুঝতে পেরে পূর্ব বাংলার জনগণ সৈরাচারী আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন গড়ে তুলে । আইয়ুব সরকার গণ আন্দোরনের মুখে মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন । ২৩ ফেবরুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে রমনার রেসকোর্স ময়দানে ( বর্তমান সোহরাওয়ার্দী ) বিশাল গণসংবর্ধনার আয়োজন করে । উক্ত সভায় ডাকসুর সভাপতি তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘ বঙ্গবন্ধু ’ উপাধিতে ভূষিত করেন ।
জাতির জনক উপাধি লাভ
৩ মার্চ , ১৯৭১ সালে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আয়োজনে ঢাকার পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ কতৃক পঠিত স্বাধীনতার ইশতেহারে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতির জনক হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ঘোষণা করেন ।
পোয়েট অব পলিটিকস
২৫ মার্চ , ১৯৭১ সালে পাকিকস্তানি হানাদার বাহিনী কতৃক শেখ মুজিবুর রহমানকে বন্দী করার পর বিশ্ব মিডিয়ায় তাকে নানাভাবে তুলে ধরা হয় । ‘ নিউজউইক ম্যাগাজিন ’ বঙ্গবন্ধুকে ‘ পোয়েট অব পলিটিকস ’ নামে আখ্যায়িত করেন । বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের শিরোনাম ছিল : বাংলাদেশ জেইল টু ফ্রিডম ।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন , “ আমি হিমালয় দেখিনি , বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি । তার ব্যক্তিত্ব ও নির্ভিকতা হিমালয়ের মতো । এভাবেই তার মাধ্যমে আমি হিমালয় দেখেছি । ”
মৃত্যু
১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে রোজ শুক্রবার স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় ।