বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের আদ্যোপ্রান্ত


বাংলাদেশ বিশ্বের ৫৭ তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইটের মালিক হলো । ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর ফ্রান্সের থ্যালিস অ্যালেনিয়া স্পেসের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু - ১ স্যাটেলাইটটি নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । এটি বাংলাদেশ সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন কতৃক বাস্তবায়িত হয় ।


স্যাটেলাইট হলো মানবসৃষ্ট বা কৃত্রিম উপগ্রহ । এটি পৃথিবীকে ডিম্বাকার পথে পরিভ্রমণ করে থাকে । পৃথিবী থেকে বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে ডেটা পাঠানো হয় । স্যাটেলাইটটি সেগুলোগ্রহণ করে এবং এমপ্লিফাই করে পৃথিবীতে প্রেরণ করে ।


২০০৮ সালে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি কৃত্রিম উপগ্রহ নির্মাণ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করেন । ২০০৯ সালে জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালায় রাষ্ট্রীয় কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপনের বিষয়টি যুক্ত করা হয় । স্যাটেলাইটের নকশা তৈরির জন্য ২০১২ সালের মার্চে মূল প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান , ‘ স্পেস পাটনারশীপ ইন্টারন্যাশনালকে ’ নিয়োগ দেওয়া হয় । ২০১৫ সালে বিটিআরসি রাশিয়ার উপগ্রহ কোম্পানি ইন্টার স্পুটনিকের কাছ থেকে কক্ষপথ কেনার আনুষ্ঠানিক চুক্তি সম্পাদন করে । স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ এবং তা কক্ষপথে রাখার জন্য রাশিয়ার ইন্টার স্পুটনিকের কাছ থেকে কক্ষপথ কেনা হয় । মহাকাশে এই কক্ষপথের অবস্থান ১১৯.১ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে । ২১৯ কোটি টাকা ব্যায়ে ১৫ বছরের জন্য এই কক্ষপথ কেনা হয় ।


যুক্তরাষ্টের মহাকাশযান সংস্থা স্পেস এক্স থেকে উৎক্ষেপণ করা বঙ্গবন্ধু - ১ স্যাটেলাইটটি ১৬০০ মেগাহার্টজ ক্ষমতা সম্পন্ন মোট ৪০ টি কু এবং সি-ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার বহন করছে । স্যাটেলাইটটির বাইরের অংশে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকার রঙ্গের নকশার উপর ইংরেজিতে লেখা রয়েছে ‘ বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু - ১ ’ ।


স্যাটেলাইটটি তৈরিতে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে মোট ১৩১৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় যা মোট ব্যয়ের প্রায় ৪৪ শতাংশ । এছাড়া ও ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হংকং সাংহাই ব্যাংকিং কর্পোরেশনের সাথে সরকারের প্রায় ১৪০০ কোটি কোটি টাকার ঋণচুক্তি হয় যা ১.৫১ শতাংশ হারে সুদসহ ১২ বছরে ২০ কিস্তিতে প্রদান করতে হবে ।


স্যাটেলাইটটির মূল অবকাঠামো তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের থ্যালিস অ্যালেনিয়া স্পেস । ২০১৮ সালের ৩০ মার্চ এটির নির্মাণ কাজ শেষ করে কেইপ কেনাভেরালের লঞ্চ সাইটে পাঠায় । এই স্যাটেলাইটটিতে মোট ৪০ টি ট্রান্সপন্ডার আছে । এর মধ্যে ২০ টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য এবং বাকি ২০ টি ভাড়া দেওয়া হবে । এই স্যাটেলাইটটির ওজন তিন হাজার কেজি ।


বঙ্গবন্ধু - ‍১ স্যাটেলাইটটি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বাংলাদেশের মোট ২ টি গ্রাউন্ত স্টেশন চালু করা হয়েছে । এর প্রধানটি হলো গাজীপুরের জয়দেবপুরে এবং আরেকটি রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় ।


স্পেস এক্স ফ্যালকন ৯ উৎক্ষেপণে যানে করে ১২ মে বাংলাদেশ সময় রাত ২ টা ১৪ মিনিটে সফলভাবে বঙ্গবন্ধু - ১ স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হয় । এটি বাংলাদেশের প্রথম ভূস্থির যোগাযোগ উপগ্রহ। সফলভাবে বঙ্গবন্ধু - ১ স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের মহাকাশ জয়ের গল্প রচিত হয় ।

Adnan Mahfuj

‘‘ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিয়ে আরো তথ্যবহুল ও গঠনমূলক আলোচনা যদি আপনার কাছে থেকে থাকে তাহলে আপনি চাইলে আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন । যা আমরা আপনার নামে আমাদের সাইটে শেয়ার করব । ‘’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *