রোহিঙ্গা সমস্যা

রোহিঙ্গা সমস্যার ইহিাস ও এর বর্তমান অবস্থা

রোহিঙ্গা কারা ?

রোহীঙ্গারা হলো রাষ্ট্রহীন মানুষ । মায়ানমারের রাখাইন রাাজ্যে তাদের বসবাস । শত শত বছর ধরে তাদের পূর্বপুরুষরা রাখাইন রাজ্যে বসবাস করে আসলেও মায়ানমার / বার্মা সরকার তাদেরকে কখনো নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয় নি । রাষ্ট্রহীন মানুষ হিসেবে তারা তাদের পাশ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে বসবাস করে ।

রোহিঙ্গাদের আদি ইতিহাস

খ্রিস্টীয় অস্টম শতকে আরাকান অঞ্চলের শাসনকর্তারা ছিলেন চন্দ্র বংশের । রামব্রী দ্বীপে আরবদের একটি জাহাজ ভেঙ্গে গেলে তারা স্থানীয়দের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে করেন এবং সেখানে বসবাস শুরু করেন । চতুর্দশ শতকে আরাকান রাজ্যে মুসলমানরা বসতি স্থাপন করে । তৎকালীন বৌদ্ধ রাজা নারেমেইখেলি তার রাজ দরবারে মুসলিম উপদেষ্টা এবং সভাসদদের সাদরে গ্রহণ করেছিলেন । পরবর্তীতে দক্ষিণের বর্মীরা আরাকান দখল করে মুসলমানদের তাড়িয়ে দেয় । তখন ব্রিটিশ ভারতের অর্ন্তগত বাংলায় ( বর্তমান চট্টগ্রাম ) প্রায় ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে আসে । রোহিঙ্গারা সেই আরাকানী মুসলমানদের বংশধর ।

আরাকানে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের চিত্র

১৬৬০ সালে ‍আরাকান রাজা থান্দথুধম্মা নিজ রাজ্যে আশ্রিত মোঘল সম্রাট শাহজাদা সুজাকে স্বপরিবারে হত্যা করে মুসলমান নিধনে নেমে পড়েন । শুরু হয় মুসলমানদের উপর নিষ্ঠুর ও অমাণবিক নিপীড়ন এবং প্রায় সাড়ে তিনশত বছর মুসলমানদের এভাবে কাটাতে হয় । ১৭৮০ সালে বর্মী রাজা বোধাপোয়া আরাকান দখল করে । সে ও ছিল চরম মুসলিম বিদ্বেষী । সে ঢালাওভাবে মুসলমানদের হত্যা করতে থাকে । ১৮২৮ সালে বার্মা ব্রিটিশদের শাসনে চলে যায় । ১৯৩৭ সালে বার্মা স্বায়ত্বশাসন লাভের পর বৌদ্ধদের পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ব্যাপক রূপ নেয় এবং তারা প্রায় ৩০ লক্ষ মুসলমানকে হত্যা করে । ১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীনতা লাভ করলেও মুসলমানদের ভাগ্যের কোনরূপ পরিবর্তন হয়নি ।



 ৪০ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি  পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান

নাগরিকত্ব বাতিল ও সামাজিক মর্যাদা হ্রাস

বর্তমানে রোহিঙ্গারা বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী । নিজ দেশে তারা পরবাসী । এরা বিশ্বের রাষ্ট্রহীন নাগরিক । ১৯৮২ সালে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাতিল করে দেয় । নাসাকা বাহিনী ও বৌদ্ধদের হামলায় শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা পাশ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশসহ বিশ্বের আনাচে কানাছে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন । তাদের কোন ভোটাধিকার নেই , নেই কোন সামাজিক ও সাংবিধানিক অধিকার । তারা মিয়ানমারের অন্যকোন প্রদেশে অনুমতি ছাড়া যেতে পারে না । মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের সংখ্যালগু জাতি হিসেবে ঘোষণা দেয়নি ; মায়ানমার সরকারের মতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশী । তাই রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাতিল করে রোহিঙ্গাদেরকে বার্মা ছাড়া করার অজুহাত খুজছিল । বার্মার গণতান্তিক আন্দোলনের নেত্রী অংসান সুচি ক্ষমতায় আরোহণ করলে রোহিঙ্গারা ভেবেছিল এবার তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে । কিন্তু সুচির দল ব্যাপক ভোটে জয়লাভ করলেও সরকার গঠন করেছে সেনাবাহিনীর সাথে আপস করে । তাই রাখাইনের মূল ক্ষমতা হলো সেনাবাহিনীর হাতে । মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের জন্য ‘ গ্যাটো ’ জাতীয় বিশেষ ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে । সেই গ্যাটোগুলোর মধ্যে আবদ্ধ মানবেতর জীবন যাপন করতে হয় রোহিঙ্গাদের । বিগত কয়েক বছর ধরে মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ সীমান্তে পুশইন করছে বাংলাদেশে অনুপবেশ করার জন্য । বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আশ্রিত অবস্থায় রয়েছে ।

রোহিঙ্গা ইস্যু - ২০১২

দুই তিনজন রোহিঙ্গা দুষ্কৃতিকারী এক রাখাইন নারীকে ধর্ষণ ও হত্যাকে কেন্দ্র করে ২০১২ সালের জুন মাসে শুরু হয় রাখাইন - রোহিঙ্গা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা । এক পর্যায়ে মায়ানমারের সেনাবাহিনী ও রাখাইন বৌদ্ধ মৌলবাদিরা মিলে রোহিঙ্গাদের উপর জাতিগত ধোলাই শুরু করে । হাজার হাজার নিপীড়িত রোহিঙ্গা ঘরবাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার চেষ্টা করে । বাংলাদেশ সরকার বিজিবির মাধ্যমে বাংলাদেশে অণুপ্রবেশ ঠেকালেও দূর্গমপথে অনেকে প্রবেশ করে । এই দাঙ্গায় প্রায় শতাধিক রোহিঙ্গা মারা যায় এবং গৃহহীন হয় প্রায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা ।

নতুন করে মুসলিম নিধন অভিযান

রোহিঙ্গা নিধনের ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ৩ জুন থেকে পূর্ব পরিকল্পিত ইতিহাসের নৃশংসতম এ গণহত্যা শুরু করে । রোহিঙ্গাদের হাতে বৌদ্ধ মহিলা নির্যাতনের অজুহাতে তারা এ গণহত্যা শুরু করে । শুরুতেই তারা ১০ জন রোহিঙ্গাকে হত্যা করে । এই হত্যার প্রতিবাদে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ শুরু করলে ভয়াবহ দাঙ্গা ভেঁধে যায় । এরপর রাখাইন বৌদ্ধরা সম্মিলিতভাবে মুসলিমদের উপর হামলা শুরু করে । ২৪ আগস্ট , ২০০৭ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে দ্যা আরাকান রোহিঙ্গা সার্লিভেশন আর্মি ( ARSA ) বা রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৮৯ জন নিহত হয় । মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এই অভিযানের নাম - অপারেশন এথেনিক ক্লিন্সিং ।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন চুক্তি

২৩ নভেম্বর , ২০১৭ সালে বাংলাদেশ - মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । এই চুক্তির আনুষ্ঠানিক নাম ‘ Arrangement on Return of Displaced Person's from Rakhine state .’ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন সুচির দপ্তরের মন্ত্রী উ কিয়া টিন্ট সোয়ে এবং আবুল হাসান মাহমুদ । ছয় পৃষ্ঠার এই প্রত্যাবর্তন চুক্তিতে ১৯ টি দফা আছে ।

Adnan Mahfuj

‘‘ রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আরো তথ্যবহুল ও গঠনমূলক আলোচনা যদি আপনার কাছে থেকে থাকে তাহলে আপনি চাইলে আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন । যা আমরা আপনার নামে আমাদের সাইটে শেয়ার করব । ‘’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *